‘‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরিলে হাসিবে তুমি কাদিঁবে ভুবন।’’- কবির এই কথাটাকে সত্য করে কোটি মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন, তিনি আর কেউ নয়- বীর মুক্তিযুদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার ও প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মোঃ আব্দুল মছব্বির। ১৯৪৬ সালের ৫ জানুয়ারি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পুরুষপাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি ২০১৯ সালের ৬ জুন ভোরে পরলোকগমন করেছেন।

আব্দুল মছব্বিরের পিতার নাম হাজী ফরিজ আলী। বংশের দিক থেকে হাজী ফরিজ আলী ছিলেন উচ্চ বংশীয় ও শিক্ষিত এবং প্রচুর অর্থ সম্পদের অধিকারী। আব্দুল মছব্বিরের মাতার নাম মোছাঃ কুলছুমা খাতুন। তিনি একজন সম্ভান্ত্য বংশের রুপবতী, পূন্যবতী, সর্বগুণ সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারি ছিলেন। আব্দুল মছব্বির ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর শরীর স্বাস্থ্যও ছিল মোটামুটি ভালো। তাঁর বাড়ির পাশেই একটি বড় পুকুর, মা-বাবার অজান্তে সুযোগ পেলে বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে সাতাঁর কাটতেন তিনি। তিনি বন্ধুদের সাথে একত্রে মিলিত হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন।

ছেলেবেলা থেকে নানা গুণের অধিকারী ছিলেন আব্দুল মছব্বির। শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর বয়স থেকে। তিনি পারিবারিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন বাড়ির পাশের পুরুষপাল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে বড়লেখা পিসি হাই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। স্মরণ শক্তি ও মনোযোগ ছিল প্রচুর লেখাপড়ায়। সর্বদা ভালো রিজাল্ট করতেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই বাবার মতই শারিরিক গঠন ছিল আব্দুল মছব্বিরের। হাটি হাটি পা পা করে হাই স্কুলের গান্ডি পেরিয়ে আসেন তিনি। ১৯৬২ হতে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত আব্দুল মছব্বির মার্শাল ল’ এবং শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি মদন মোহন কলেজে ভর্তি হন। তিনি নিজের সবুজে ঘেরা গ্রামকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আর এজন্যই তিনি সিলেট হতে বিদ্যাপীঠ পরিবর্তন করে নিজ এলাকায় চলে আসেন। বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন মোঃ আব্দুল মছব্বির।

১৯৭০ সালে বিয়ানীবাজারে হাতে গোনা কয়েকটি মোটরসাইকেল ছিল তখন। তখনকার সময় তার একটা মোটরসাইকেল ছিল (হোন্ডা ৫০)। মোঃ আব্দুল মুছব্বির মোটরসাইকেলে চড়ে কলেজে যেতেন। তিনি সব সময় খুব র্স্মাট ভাবে চলাফেরা করতেন। তাঁর (গোঁফ) স্টাইল দারুন ছিল। তিনি নিজ কর্মগুণে এবং নেতৃত্বের গুনাবলি দ্বারা বিয়ানীবাজার কলেজের ছাত্র সংসদের প্রতিষ্ঠাতা ভিপি মনোনীত হন। তিনি শুধু বিয়ানীবাজার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভিপি নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্র, সেই সাথে একজন দক্ষ নেতৃত্বের নায়ক ছিলেন। তদুপরি তাঁর অমায়িক ব্যবহার, মধুর আচরণ সবার কাছেই সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। যার ফলে তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা ছাত্রলীগ। যাত্রা শুরু করে বিয়ানীবাজার কলেজে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের অন্যতম সংগঠন ছাত্র সংসদ। তিনি কঠোর প্ররিশ্রম করে সবার জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। আব্দুল মুছব্বির কোন কাজে হেরে যাননি। সব সময় সকল কাজে জয়ী হয়েছেন। তিনি সবার কাছে প্রিয় ছিলেন। তাঁর সহজ সরল চালচলন মিষ্টি ব্যবহার মানুষের মনকে মুগ্ধ করেছিল।

১৯৭০ সালের বিয়ানীবাজরের আকাখাজানা গ্রামের সম্ভান্ত্য পরিবারের কন্যা মোছাঃ রওনক জাহান সুলতানাকে বিবাহ করেন। অত্যন্ত জাকজমকের সাথে বিয়ের উৎসব সম্পন্ন হয়। পারিবারিক জীবনে অনেক সুখে স্বাছন্দ্যে জীবন কাটছিল তাদের। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। দলভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় দামাল ছেলেরা মিটিং করতে দেখা যায়। শুরু হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি। আব্দুল মুছব্বির ছাত্রনেতা হওয়ায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ তৎকালীন রেসর্কোস ময়দানে বসে শুনেছেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজ চক্ষু ভরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একই মঞ্চে বসে। তিনি অনুপ্রানিত হন সেই আগুনঝরা শ্লোগানে। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’- কালজয়ী এই ভাষণ শুনে তার শরীরের শিরায় উপশিরায় রক্ত টগবগিয়ে উঠে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি দেশ মাতৃকাকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণে অনুপ্রানিত হয়ে মুক্তিকামী মানুষের কথা ভেবে, পাকিস্তানীদের বৈষম্য হতে দেশকে মুক্ত করতে, জাতির পিতার আদেশে মোঃ আব্দুল মুছব্বির মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শেষ্ঠ সময় তাঁঁর’- সারা পৃথিবী কাপানো উচ্চ কন্ঠের এই কাবিতাটি মাতৃভুমি প্রেমিক অনেক ছাত্রনেতাসহ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে ধাবিত করার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে জন্মভূমিকে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রথমে একমাস গেরিলা ট্রেনিং করেন। তারপর খানেক জে এল ডাব্লিউ প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৪নং সাবসেক্টরের ৪নং সেক্টরে যোগদান করেন আব্দুল মুচ্ছব্বির।

যুদ্ধ চলাকালীন সময় ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যভাগে হানাদার পাক বাহিনীর দোসররা আব্দুল মুছব্বিরের বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। তখন তার মা কুলছুমা খাতুনসহ পরিবারের সবাই আশ্রয় নিয়েছিলের বড় বোনের বাড়িতে। আব্দুল মুছব্বির ঘর পুড়ানোর খবর শোনে স্বজনদের এক নজর দেখতে ছোটে যান বোনের বাড়িতে। তাঁর মা তাকে দেখামাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। মাকে একনজর দেখে শান্তনার বাণী শুনিয়ে ফিরে যান বিয়ানীবাজার। ততক্ষণে অনেক সহযোদ্ধা এসে জড়ো হয়েছেন বিয়ানীবাজারে। তাদেরকে তিন গ্রুপে বিভক্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ করেন। সেদিন যৌথ বাহিনীর আক্রমনে দিশেহারা হয়ে হানাদার বাহিনী পিছু হাটতে বাধ্য হয়। আকাশে বাতাশে মুখরিত করে ধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।

দীর্ঘ ৯ মাস রণাাঙ্গনে মরণপণ যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর সূর্য উদয়ের সাথে নিজের জন্মস্থান বিয়ানীবাজারে এসে পৌছান আব্দুল মুছব্বিরসহ সকল যোদ্ধারা। এলাকার মানুষ ঘুম থেকে উঠে পুরা অঞ্চল জয় বাংলার শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন। সেদিন গ্রামের সকল মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হন সকল মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন দেশে বাতাসের পত পত করে উড়তে থাকে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। যা মা-বোনের ইজ্জত সম্ভম ও লাখো শহীদের লাল রক্তের বিনিময়ে পাওয়া।

বিয়ানীবাজারে হাতেগুনা কয়েকজন কমান্ডার ছিলেন তার মধ্যে অন্যতম একজন হলেন ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার  আব্দুল মুছব্বির। যুদ্ধের পর গ্রামে ফিরে ১৯৭২ সালে আবার নতুন করে ঘর তৈরী করেন তিনি। এরপরই তিনি মারাত্মকভাবে নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন এ রোগের সাথে যুদ্ধ করে আবার নিজেকে শক্তিশালী করে ঘুরে দাড়ান তিনি। বিবাহিত জীবনে আব্দুল মছব্বির ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের গর্বিত বাবা হন তিনি। দাম্পত্য জীবনে ছিলেন একজন সুখী মানুষ তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক যুদ্ধা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ছাত্র রাজনৈতিক হতে। আওয়ামী( লীগের রাজনীতি বিয়ানীবাজারে সুসংগঠিত করার মধ্য দিয়ে তিনি কাজ করে গেছেন অত্যন্ত নিরলসভাবে। যা বর্তমানে রাজনীতিদের কাছে উদাহরণ স্বরূপ।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পর দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ১৯৭৫ সালে প্রথমে জার্মান পরে লন্ডন চার বছর থেকে দেশে দিরে আসেন পরিস্থিতি শান্ত হবার পর। ১৯৮০ সালে দেশে এসে বিয়ানীবাজার কলেজ রোডে একটি দোকান নিয়ে ফার্নিচারের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। যে দোকানের নাম ছিল পলাশ কাঠ বিতান। পাশাপাশি তিনি কৃষিনির্ভর অনেক জমি ক্রয় করেন সেখানে। এলাকার গরিব দুঃখীদের কাজের কর্মসংস্থান করে দেন তিনি। কাজের ফাঁকে অবসরে তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানের বিজয় দিবসসহ নানা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করতেন। এলাকার সবাই তাকে অতিথির আসনে পেয়ে গর্বিত হতো। তিনি দেশাত্ববোধক গান বেশি পছন্দ করতেন। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে দেশের গান শুনলে তিনি অতীতে ফিরে যেতেন। এক দৃষ্টিতে পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এমনকি বাচ্চাদের সাথে তিনিও ঠোঁট মিলিয়ে গান গাইতেন। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা/ তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবেনা। না-না-না শোধ হবে না/মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে/ সাতকোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা/ সে দানের মহিমা/ কোন দিন শেষ হবেনা/ না-না-না শেষ হবে না।’

গ্রামের নানা প্রতিকুলতায় তিনি সবার সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৮৮ সালে সদূর আমেরিকা পাড়ি জমান আব্দুল মছব্বির। দীর্ঘ একুশ বছর প্রবাসে কাটান তিনি। আমেরিকার মিশিগানে বসবাস করতেন। সেখানেও সামাজিক-রাজনৈতিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মিশিগানে বসবাসকারী বিয়ানীবাজারের জনসাধারণের গড়ে তোলা সংগঠন বিয়ানীবাজারের সমিতির সাবেক সভাপতিও ছিলেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আমেরিকার সাবেক কমান্ডার, ঘাতক দালাল নির্মূলে কমিটি আমেরিকার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, জালালাবাদ এ্যাসোসিয়েশন ইনক আমেরিকার সাবেক উপদেষ্টা এবং ফুটবল ফেডারেশন অব আমেরিকা ইনক এর সাবেক সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সমাজ সেবামূলক সংগঠন বিভিন্ন দায়িত্ব দক্ষতার সহিত পালন করেছেন।

প্রবাস জীবনে তিনি একবার সড়ক দূর্ঘটানায় মারাত্মকভাবে আহত হন। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধিন থাকার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে আবার সাংগঠনিক কাজে যোগ দেন। দুর্ঘটনার কয়েক বছর পর আবার তিনি র্হাট এ্যাটাক করেন। তিনি আমেরিকা থাকাকালীন সময় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। লন্ডন, কানাডা, দুবাইসহ অনেক দেশ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০১৫ সালে প্রবাস জীবনের অবসান কাটিয়ে মাতৃভূমি স্বদেশে চলে আসেন।

বয়সের ভারে এবং শারিরিক অসুস্থতায় একদম দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। দেশে এসে ছেলে-মেয়েদের সম্ভান্ত পরিবারে বিয়ে দেন তিনি। যথাযথভাবে একজন গর্বিত পিতার সকল দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ক্রমান্নয়ে দৈহিক কর্মক্ষমতা কমে আসে তার। নানাবিদ রোগে বাসা গড়ে তাঁর শরীরজুড়ে। শারিরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে দীর্ঘদিন শয্যা ছিলেন  তিনি। তবুও তিনি দান করে গেছেন অকাতরে। গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে যে কেউ সাহায্যের জন্য তার কাছে আসলে তিনি কখনোও খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। শ্বাসকষ্ট রোগে তাকে কষ্ট দিত বেশী। অবশ্য মাঝে মাঝে তিনি সুস্থতা বোধও করতেন। আবার কখনো কখনো রোগের মাত্র বেশী হলে তিনি শিশুর মত কান্নাকাটি করতেন। এলাকার অনেক মানুষ এসে তাঁর কাছ থেকে যুদ্ধের গল্প শুনতো। তিনি শিশুদের ভালোবাসতেন। তখন আব্দুল মছব্বির তাঁর বিছানার পাশে থাকা চকলেটের বক্স থেকে সবাইকে চকলেট দিতেন। বিভিন্ন গল্পরশোনাতেন তাদেরকে।

একদিন হঠাৎ মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দেন তিনি। চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দেশের মাটিতে নিজ মাতৃভূমিতে ২২ জৈষ্ট্য ১৪২৬ বাংলা, ০১ শাওয়াল ১৪৪০ হিজরী, ৫ জুন ২০১৯ইং তারিখে বুধবার দিবাগত রাত ৩.৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নাল্লিাহি ওয়াইন্নালিল্লাহি রাজিউন)। দেশ ও দেশের বাইরের অগণিত শুভাকাঙ্খিদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

তাঁর মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আব্দুল মছব্বিরের মৃত্যু সংবাদ যে যেখানেই শুনেছেন সেখান থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও তাকে এক নজর দেখার জন্য সবাই ছোটে এসেছেন। সেদিন উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রুতে ভরা ছিল। সকলের মুখে ব্যথার কালো ছায়া। সব কিছু যেন থমকে গেছিল সেদিন তাঁর ওনার মৃত্যুতে। তাকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনপুর্বক এবং এলাকাবাসীর ভালোবাসায় সমাহিত করা হয়।

জন্ম নিলে মৃত্যু হবে এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে তার আপন কীর্তি দিয়ে। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আল্লাহ প্রদত্ত কিছু কিছু মানুষ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে নিজেকে পুড়িয়ে সমাজকে আলোকিত করেছেন। এই এক দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে আব্দুল মছব্বিরে নাম। জাতির বুকে লাল সবুজের পতাকায় অমর হয়ে রইবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল মছব্বির। আর চির অম্লান হয়ে তিনি গণমানুষের অন্তরে থাকবেন সারাজীবন। যার ঋণ কখনোই পরিশোধের নয়। তিনি চির ভাস্কর।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-